প্রবাস থেকে স্মৃতিচারণ।

প্রবাস থেকে স্মৃতিচারণ।

Md Shahin Akter


ছবি:- সংগৃহিত।

প্রবাসে থাকি প্রায় নয় মাস চলছে। অনেক কথাই আজ মনে পড়ছে। বাড়ির ছোট-বড়,কাছের-দূরের,বন্ধু-বান্ধব,ভাই-বোন,মা-বাবা,সহ গ্রামের সবার কথা মনে পড়ছে।তারপরও করার কিছুই নেই!যেটা উদ্দেশ্য সেটা সফল করে বাড়ি ফেরাই সফল ছেলের কাজ।আমারও তাই করতে হবে।বাদবাকি দয়াময় আল্লাহর ইচ্ছা।

সামনে কুরবানি ঈদ আসছে..

চোখের সামনে কত কিছুই ভাসছে… কুরবানি ঈদ মানে সকালে আব্বু-ভাই সহ গ্রামের লোকের সাথে ঈদগাওতে নামায আদায় করা,কোলাকুলি করা তারপর শুরু হয়ে যায় গোস্ত কাটার জন্য যুদ্ধ।বাড়ি থাকতে করতে হয়েছে বা বাড়ি থাকলে করতে হতো।দায়িত্ব বা কর্তব্য বলে কথা।এখন আমি নেই,তাই বলে কাজ তো থেমে থাকবে না।দায়িত্ব কেউ না কেউ নিবে।তারপর কাজ শেষ করে ফোনে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা,তারপর এক সাথে আড্ডা দেওয়ার একটা মহড়া চলে ঈদের বেশ কিছুদিন আগে থেকে।সেগুলো আর হবে না হয় তো বেশ কয়েক বছর ধরে(যতদিন প্রবাসে থাকবো,জানি না আল্লাহ জানে)।কোন সুসংবাদ বা কোন দুঃসংবাদ দেশ থেকে আসলে নিজেকে বড় বেশি নিয়ন্ত্রণ করতে হয় আগে।তারপর শান্তনা বা অনুপ্রেরণা ।এটা শিখতে হয়েছে এই প্রবাসে এসে।আপন হয় পর,আর পর হয় আপন।এটাও শিখেছি এই প্রবাসে এসে।এখানে নিজের কোন কিছুর মূল্য নেই কারও কাছে।দেশের টান সবার থাকে, আমারও আছে।সেই সব দিন গুলো ফিরে পাবো না ঠিকই, কিন্তু স্মৃতিচারণ করতে পারি বারবার।আজ তাই সেই সব দিনগুলো শুধুই স্মৃতি।হয়তো স্মৃতিরোমন্থন করে ব্যথাহত হবো। এই প্রবাসী মন আজ বড় হাহাকার করে নিজ দেশের জন্য,নিজ পরিবার-পরিজনের জন্য।আজ দু’টারই বেহাল দশা।দুইটার বেহাল দশা এই কথাটা এই কারণে বললাম, দেশের যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে(মানুষ্যসৃষ্টি আর আল্লাহর দেওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ)তার সাথে আমার পরিবারের পরিস্থিতি বেশ মিল পাই।হয়তো ঊনিশ বা বিশ হবে।তারপরও কিন্তু বেশ মিল খুঁজে পাই।বয়স বাড়লে অনেক কিছুই স্মৃতিশক্তি থেকে লোপ পাই।বাড়ির গৃহকর্তারও তাই হয়।জং ধরে যেমন অকেজো বস্তুর,ঠিক তেমনি অকেজো গৃহকর্তা জং ধরে পড়ে থাকে গৃহ কোণে।থাকে না কোন মূল্য।বয়সের ভারে আর সংসারের(সন্তান-সন্তানাদি জ্বালা সহ পরিবারের যে চাপ) দায়িত্বের চাপে বয়ঃবৃদ্ধ গৃহকর্তা তখন হতাশা আর দুঃচিন্তায় থাকে।তখন অনেক স্মৃতি মনে পড়েও পড়ে না।কাকে কি বলেছি বা দিয়েছি এই সব কিছুই তার তখন অজানার মত মনে হয়।তখন অন্য কুলে পার হয়ে যাওয়া মানুষ্য প্রাণী তখন দূর থেকে দেখতে থাকে মজা।কি হবে এরপর?প্রশ্ন জাগে মনে হাজারও!সমাধান হবে না কি সমস্যা জর্জরিত?

তখন কাব্যিক ভাষাতে বলতে ইচ্ছে করে..

“তবে ভেবো না হে নবীন, তোমাকেও হতে হবে একদিন এই প্রবীণ।”

তখন তুমি কি করবে?সংসার চালাতে গিয়ে গৃহকর্তা হয়েছে ঋণী জগৎ সংসারে তোমাদের লাগি।এখন কেন করো এত ছল-ছাতুরি।জগৎ এর ধর্ম এমনই, তুমি এখন সন্তান,পরে হবে বাবা,তারপর দাদা,তারপর ডাক পড়লে চলে যেতে হবে নিজ ঘরে একা একা।যেখানে আর পৃথিবীর কেউ জ্বালাবে না,যন্ত্রণা দিবে না।রহমতের মালিক মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহুতালা,আবার তিনিই পরীক্ষা নেওয়ার জন্য বান্দার কত বিপদে ফেলে বা কখনো পাশে দাঁড়াই।তাকেই আমরা চিনতে পারি না যৌবন-শক্তি থাকতে,তাহলে নিজের পিতা-মাতাকে কি ভাবে চিনবো বলেন? বয়সের ভারে যৌবন-শক্তি কমতে থাকবে,স্মৃতি লোপ পাবে কিন্তু যে পরিণতি তুমি করেছিলে যৌবন বয়সে,তার পরিণাম কে গ্রহণ করবে?নিশ্চয় তোমাকে।আর আল্লাহর স্মৃতি থেকে তা কখনো মুছে(ডিলিট) যায় না।তার বিচার সূক্ষ্ম-অতিসূক্ষ্ম।এই বিচারের জন্য হয় তো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হয়।তা ছাড়া কিছুই নয়।

বি:দ্র:- চোরে শুনবে না ধর্মের কাহিনী জানি। তারপরও বলা শ্রেয়, চোরকে একদিন না একদিন ধরা পড়তেই হবে।আর সেই ধরা শেষ ধরা,পালাবার পথ থাকে না।

তারিখ:- ২৩/৮/২০১৭ইং।

৬ভাদ্র,বঙ্গাব্দ ১৪২৪।

লেখক:- একজন ছাত্র(প্রবাসী,মালায়েশিয়া)

Leave a comment